রাজশাহীর দুর্গাপুরে আঞ্চলিক অফিস উদ্বোধন নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দৈনিক কালবেলা পত্রিকার প্রতিনিধি রাজু আহমেদ আহত হয়েছেন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দাওকান্দি বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিক রাজু আহমেদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন- জয়নগর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য শাহজালাল হোসেন, দেলশাদ, বিএনপি কর্মী আনোয়ার হোসেন বধু ও বেলাল উদ্দিন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যাওয়ায় তাদের নাম জানা সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে রাকিবুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দাওকান্দি বাজারে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির আঞ্চলিক শাখা অফিস উদ্বোধনের আয়োজন করে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোর্শেদ শিবলী। সন্ধ্যার দিকে নেতাকর্মীরা জড়ো হলে কৃষক দল নেতা ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য খায়রুল ইসলামের অনুসারী নেতারা সেখানে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালীন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া একটি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।
এ সময় সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক রাজু আহমেদের ওপরও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য খায়রুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়।
হামলার শিকার সাংবাদিক রাজু আহমেদ জানান, ইউনিয়ন বিএনপির আঞ্চলিক অফিস উদ্বোধন নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার খবর পেয়ে আমি আগে সেখানে অবস্থান নিই। বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালীন খায়রুল ইসলামের অনুসারী দাওকান্দি গ্রামের জামিনুল ইসলাম জয় (২১) ও একই এলাকার আছান আলীর ছেলে শাহাবুর ইসলাম (২৭) আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। চিকিৎসা শেষে হামলার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেবেন বলেও জানান সাংবাদিক রাজু।
জেলা কৃষক দলের সদস্য ও উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম বলেন, আগে থেকেই দাওকান্দি উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন বিএনপির একটি অফিস ছিল। আওয়ামী লীগের শাসনামলে অফিসটি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুনরায় অফিসের জায়গা দখলে নিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। সেখানে আরও একটি অফিস করার যৌক্তিকতা দেখি না।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মোজাফফর মাস্টার ও শিবলীর লোকজন অস্ত্রশস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে আসে। যার কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোর্শেদ শিবলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও লবিং-গ্রুপিংয়ের কারণে প্রায় দিনই কোথাও না কোথাও বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব ছোটখাট কোন্দল নিরসন করা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটার আশংকা রয়েছে।
দুর্গাপুর থানার ওসি দুরুল হুদা বলেন, খবরটি শুনেছি, তবে থানায় কেউ অভিযোগ জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।