বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ এখনও সৃষ্টি হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে। সাগরে ঘনীভূত হচ্ছে গভীর নিম্নচাপ। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে নিম্নচাপ হিসেবে রয়েছে ‘ডানা’।
আবহাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়তে পারে। এতে বাংলাদেশের খুলনা এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা প্রভাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় সোমবার (২১ অক্টোবর) সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম দেওয়া হবে ‘ডানা’।
বেশ কয়েকটি আবহাওয়া মডেল অনুসারে, ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে বাতাসের গতিবেগ বুধবার থেকে ৬০ কিমি/ঘণ্টা পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে—যা বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার সকালের মধ্যে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
সোমবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের জারি কড়া এক সতর্ক বার্তায় বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়; যেন স্বল্প সময়ের নোটিশে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
এদিকে, ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) আরও বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগরের উপর রোববারের নিম্নচাপ এলাকাটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে সরে গিয়ে সোমবার সকাল নাগাদ একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে ঘনীভূত হয়েছে।
আইএমডি জানায়, লঘুচাপটি মঙ্গলবারের মধ্যে নিম্নচাপ এবং বুধবারের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
এটি বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে; বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়তে পরে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পরে, যা দমকা হাওয়া-সহ ঘণ্টায় ১২০ কিমি পর্যন্ত উঠতে পরে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপকূলে আঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৪টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটির কেন্দ্র প্রায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপরে অবস্থান করছিল। সুস্পষ্ট লঘুচাপটির কেন্দ্রের চারপাশে বায়ুর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার—যা বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে ও আগামী ২ দিন একই পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে যে স্থানে আছে, সেই স্থানে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অপেক্ষা বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাহলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।’
‘লঘুচাপটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগরের পানিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আগামী তিন দিন ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হতে থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।’
এদিকে, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
এছাড়া, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।