পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা, মেধার ভিত্তিতে সিভিল প্রশাসন গড়ে তোলা, জনগণের জন্য জনবান্ধব প্রশাসন প্রস্তুত করা, এমন অঙ্গীকারে একমত হন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের ময়মনসিংহের বিভাগীয় কর্মকর্তারা। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশে তারা ঐক্যমত পোষণ করেন, হইলে এখনই, নইলে আর নয়।
আজ শনিবার ২৬ অক্টোবর সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অডিটরিয়ামে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিভাগীয় সমাবেশে সিভিল সার্ভিসের ৩০০শত এর অধিক ক্যাডার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহ জেলার সমন্বয়ক ডা. বদর উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লাইভস্টক ক্যাডারের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ডা. আহসান হাবিব, কৃষি ক্যাডারের কেন্দ্রীয় ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমন্বয়কারী কৃষিবিদ কে.এম. বদরুল হক, শিক্ষা ক্যাডারের ড.মো.মফিজুর রহমান, লাইভস্টক ক্যাডারের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ডা. মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন, সমবায় ক্যাডারের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম, কৃষি ক্যাডারের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক আসিফ ইকবাল বক্তৃতা করেন।
অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা হতে আগত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য, কৃষি, লাইভস্টক, শিক্ষা, সমবায়, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাবৃন্দ।
সমাবেশে বলা হয়, দক্ষ, প্রফেশনাল, আধুনিক ও সময়োপযোগী সেবা ব্যবস্থা চালু করে জনগণের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’-এই ফরমুলায় জনপ্রশাসন তথা জনসেবা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করতে হবে। মেধাভিত্তিক, বৈষম্যহীন ও কোটামুক্ত সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উপসচিব ও তদুর্ধো পদকে ক্যাডার বহির্ভূত পদ ঘোষণা করে সকল ক্যাডার থেকে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হবে। অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) পদ্ধতি চালু করতে হবে।
অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা সকল ক্যাডারের মধ্যে পদোন্নতি, গ্রেড, প্রিভিলেজ, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে সমতার নীতি অবলম্বন করে সকল ক্যাডারের মধ্যে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির দাবি করেন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এর সুপারিশের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে নতুন করে তিনজন সদস্য নেওয়া হলেও তারা বৃহত্তর সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। কমিশনের অফিস সচিবালয়ে থাকায় কমিশন সদস্যদের সাথে যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে তা বাইরে স্থানান্তরের দাবি করেন কর্মকর্তারা। ‘জনপ্রশাসন’ শব্দ বাতিল করে ‘জনসেবা’ বা ‘জন ব্যবস্থাপনা অথবা উপযুক্ত শব্দ গ্রহণ করে সিভিল সার্ভিসকে জনগণের সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার দাবি করেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে প্রত্যেক ক্যাডার থেকে সংস্কারের প্রস্তাব গ্রহণ করার দাবি করেন উপস্থিত কর্মকর্তাগণ।
২৩টি ক্যাডারে গ্রেড-১ পদে কোন কর্মকর্তা নেই। তথাকথিত ফিডারের নামে সকল ক্যাডারে পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন যাদের চাকরি ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে এমন কি ৩০ বছরও হয়েছে। তাই ফিডার পূর্ণতার নামে কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে রাখার চক্রান্ত পরিহার করার আহ্বান জানান কর্মকর্তারা।
জানানো হয়, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করে। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা, অবকাঠামো নির্মাণ, রাজস্ব আদায় এই ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়। সিভিল সার্ভিসে সকল বৈষম্য দূর করে জনকল্যাণমূখী সেবা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করতে তাই সকল ক্যাডারের সাথে মতবিনিময় করে সুপারিশ গ্রহণের জন্য কমিশন সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান উপস্থিত কর্মকর্তাবৃন্দ।