শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় জগন্নাথপুরে কিশোর রায়হান মিয়া নিহত শিক্ষকের বাসা থেকে ১৮৩ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ বিএনপি নেতা আটক কুষ্টিয়ায় মাদকসহ দুই পালাতক আসামি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার মাদ্রাসা-এ-গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী’র আলিম বিভাগ শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক “দরসে তাসাউফ” অনুষ্ঠিত বীরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত মঈন উদ্দিন – ফখরুদ্দীনের মত ৩ মাসের জন্য এসে দুই বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে, এদেশের মানুষ কাউকে ক্ষমা করবে না : ফারুক ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪ অভিযানে হিরোইনসহ এক নারী মাদক কারবারী গ্রেফতার কমলো স্বর্ণের দাম ময়মনসিংহে ভোজ্যতেলের গুণগতমান নিশ্চিতকরনে রেগুলেটরি মনিটরিং সংক্রান্ত এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

ইন্টারনেটের যে জগৎ মানুষের ঈমান ধ্বংস করে

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা / ১ পড়া হয়েছে
আপডেট শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিন দিন ইন্টারনেটজগতে মানুষের বিচরণ বাড়ছে। সব বয়সী ও প্রায় সব পেশার মানুষই কমবেশি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। স্ট্যাটিস্টার তথ্য মতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫.৪৫ বিলিয়ন। বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৩ কোটি এক লাখ। ২০২৪-এর শেষ দিকে এসে এটি আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। ইন্টারনেট ব্যবহার যেমন দিন দিন বাড়ছে, তেমনি ইন্টারনেটকেন্দ্রিক অপরাধও দিন দিন বাড়ছে। ভার্চুয়ালজগতে তৈরি হয়েছে ভয়ংকর সব অপরাধ গলির।

যেখানে বিচরণ ঘটলে একটি মানুষ চার দেয়ালের ভেতরে থেকেও অনেক বড় বড় অপরাধে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে।
তাই আমাদের উচিত আমাদের সন্তানরা যেন ইন্টারনেটজগতের এমন গলিতে প্রবেশ না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক (দায়িত্বশীল) এবং তোমরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। …একজন পুরুষ তার পরিবারের রক্ষক, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।..(বুখারি, হাদিস : ৫১৮৮)
বর্তমানে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটের প্রতি বেশি আসক্ত। ভার্চুয়াল দুনিয়ার মরীচিকা তাদের বেশি আকর্ষণ করে। বিকৃত বিনোদন, ফ্রিতে দামি দামি ডিজিটাল প্রডাক্ট হাতিয়ে নেওয়া কিংবা শর্টকাটে বড় লোক হওয়ার স্বপ্ন তাদের কখনো কখনো ইন্টারনেটের এমন অন্ধকার জগতে নিয়ে যায়, এটি তাদের ঈমান ও জীবন দুটিকেই হুমকিতে ফেলে দেয়।  ইন্টারনেটের তেমনই একটি ভয়ংকর জগৎ হলো ডার্ক ওয়েব।

 

ডার্ক ওয়েব হলো, অনলাইনভিত্তিক ভয়ংকর অপরাধজগৎ, যা মানুষের কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর।

ডার্ক ওয়েব ব্যবহারকারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখে নানা ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। যেমন—হ্যাকিং, মাদক বিক্রি, অস্ত্র বিক্রি, কপিরাইট লঙ্ঘন, চোরাচালান, গুপ্তহত্যা, পর্নোগ্রাফি, মানবপাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ পরিচালনা করে।
ডার্ক ওয়েবে বেশির ভাগ উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা যায় মূলত বিভিন্ন মূল্যবান ডিজিটাল পণ্য, যেমন—দামি সফটওয়্যার, বেস্ট সেলার বই, সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা, গান ইত্যাদির পাইরেটেড কপি ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়। যেহেতু এসব কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয়, পরিচয় গোপন রেখে, তাই দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া যায় না। অথচ ডিজিটাল পণ্যের স্বত্ব সেই পণ্যের নির্মাতার হক। তা পাইরেসি লঙ্ঘন করে ব্যবহার কিংবা বাজারজাত করা অন্যের হক নষ্ট করার শামিল। রাসুল (সা.) বলেছেন, কারো সম্পদ তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। (বায়হাকি)

ডার্ক ওয়েবের জগতে এটা তো সবচেয়ে ছোট একটি অপরাধ। এটি যেহেতু অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য, তাই আস্তে আস্তে অনেকে বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এখানে ভয়ংকর সব মাদক সস্তায় পাওয়া যায়, দুর্ধর্ষ সামরিক অস্ত্র পরিচয় গোপন রেখে কেনা যায়। ক্ষতিকর এসিড, নকল গহনা, নকল চেক, নকল ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদিসহ ক্ষতিকর সব কিছুই পাওয়া যায় এখানে। আর এই ব্ল্যাক মার্কেটগুলো এতটাই সুরক্ষিত যে এখানকার ক্রেতা, বিক্রেতাকে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব।

সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এখানে নাকি পেশাদার খুনি পর্যন্ত ভাড়া করা যায়, যারা ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে মানুষ পর্যন্ত খুন করে ফেলে। এ ছাড়া সন্ত্রাসীরা কিভাবে নানা অপরাধের ছক আঁটবে, কিভাবে অবৈধ বিস্ফোরক বাড়িতে বসে তৈরি করবে, এমন কোনো অপরাধমূলক কাজের টিউটরিয়ালও নাকি ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়। এ ছাড়া এটি বিকৃত রুচির বিনোদনের বিশাল ভাণ্ডার, যার প্রতিটি কাজই জঘন্য হারাম ও শয়তানের কর্ম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শয়তানের যাবতীয় কর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানি কাজ, তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সাফল্যমণ্ডিত হতে পারো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)

আরেকটি বিপদের কথা হলো, ডার্ক ওয়েবের পরতে পরতে বহু হ্যাকার ওত পেতে বসে থাকে। ফলে ব্যবহারকারী যখন কোনো লিংকে ক্লিক করে তখন তার ডিভাইস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়, অনেক ক্ষেত্রে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ডিভাইসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, এমনকি তার ডিভাইসের ক্যামেরা অ্যাক্সেস পর্যন্ত তাদের দখলে থাকে, যা ব্যবহারকারী টেরও পায় না। ফলে তার অজান্তেই তার অনেক স্পর্শকাতর বিষয় ডার্ক ওয়েবের বাজারে বিক্রি হতে থাকে। অথবা তার ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণে তাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর রোষানলে পড়তে হতে পারে। এ জন্যই মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেছেন, ‘তোমরা জালিমদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে, আর তখন আল্লাহ ছাড়া কেউ তোমাদের অভিভাবক থাকবে না, অতঃপর তোমাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৩)

কেননা জালিমদের সাহচর্য ও তাদের অনুকরণ মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। তাই শুধু দেখার জন্যও এই জগতে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এখানকার একটি ভুল পদক্ষেপের জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে। প্রত্যেক মুমিনের উচিত এ রকম সর্বনাশা কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের ও নিজেদের স্বজনদের দূরে রাখা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার
  • ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930