সিলেট বিভাগের প্রবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবে ওসমানী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের জনতা। দীর্ঘ দিনের এ দাবি বাস্তবায়নে তারা অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
১ নভেম্বর শুক্রবার বাদ জুমা সিলেট নগরী কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব দাবি তুলে ধরেন।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত এবং অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে ‘সিলটী আওয়াজ’ এবং ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুল্লি ফাঙ্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট যৌথভাবে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
সিলটী আওয়াজের আহবায়ক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শুধু নামে মাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও এখানে অন্যান্য দেশের ফ্লাইট উঠা-নামার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। ফলে, সিলেট অঞ্চলের বিদেশ যাত্রীদের চরম হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। সেই সাথে সিলেট বিদ্বেষী চক্র বাংলাদেশ বিমানে ভাড়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করে প্রবাসী যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ দেশের ছাত্র-জনতা যেমনি সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে তেমনি সিলেটবাসীকেও ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান বক্তারা। সেই সাথে সিলেটের গ্যাস বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে সংযোগ প্রদান, ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো সিলেট টু আখাউড়া নতুন ডাবল রেললাইন নির্মাণ করা এবং সিলেট টু ঢাকা মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করারও দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধন কর্মসূচি সমর্থনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-চট্টগ্রাম ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এসএমসিসিআই) এর পরিচালক, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেটের পরিচালক ও সৌদিআরব প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাপ্তান হোসেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম ও মহাসচিব উৎফল বড়ুয়া।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ কাপ্তান হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে বলছি অবিলম্বে প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে সিলেটবাসীকে সম্মানিত করুন।
সিলটী আওয়াজের সদস্য সচিব সাংবাদিক এম এ মতিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী বলেন, প্রবাসীসহ বর্তমানে সিলেটবাসীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। যা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়িত না হলে এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে। এসব দাবি আদায়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি।
মানববন্ধনে সিলটী আওয়াজ ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকের সদস্য সচিব আলহাজ এম এ রব বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে দেশে আসতে গেলে চাহিদা মতো বিমানের টিকেট পাওয়া যায় না। অথচ, বিমানের অনেক সিট খালি থাকে। প্রবাসীদের এই দুর্ভোগ লাঘব না হলে বিমানকে পরিহার এবং প্রয়োজনে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করবে বলেও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদান ও একাত্মতা পোষণকারীরা হলেন সিলটী আওয়াজ কুয়েত কমিটির আহবায়ক হাজী শওকত আলী, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সুজন সিলেট জেলা সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, এফবিসিআই পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মুফতি আতাউর রহমান চৌধুরী, গণদাবী পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চৌধুরী আতাউর রহমান আজাদ, সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ সভাপতি এডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরী, সিলেটস্থ সুনামগঞ্জ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ বদরুল আলম, সিলেট প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এম এ হান্নান, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, শাবির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম, ফ্রান্স প্রবাসী হাজী মো. হাবিব, সিলটী আওয়াজ এর প্রচার সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মোশাররফ হোসেন খান, জগন্নাথপুরের ছায়াদ মিয়া, রুহুল ইসলাম মিঠু প্রমুখ। শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জিয়াউর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খান বলেন, সিলেটী প্রবাসীরা বাঁচলে সিলেট বাঁচবে, প্রবাসীদের দুর্ভোগ হলে সিলেটবাসী দুর্ভোগে পড়বে। তাই আমাদের আন্দোলন পর্যায়ক্রমে আরো জোরালো করা হবে। তিনি উপস্থিত সকলকে ক্যাম্পেইন কমিটি ইউকে ফর ফুল্লি ফাঙ্কশনাল ওসমানী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এর আহবায়ক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর সালাম ও শুভেচ্ছা জানান।
আন্দোলন সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।