প্রকৃতির প্রলয়ে আজ ম্লান হয়ে পড়েছে মানুষের মুখের হাসি। গৃহহারা হয়েছে অসংখ্য পরিবার। নিঃস্ব হয়েছেন অনেক খামারী। বন্যার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়েছে ফসল। গবাদি পশু বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বন্যার পানিতে খড় নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ও চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে চরম গো-খাদ্য সংকট। একদিকে নিজেদের খাদ্য সংকট অন্য দিকে গবাদিপশুর রোগ ব্যাধি প্রকট। সবমিলিয়ে বিভীষিকাময় সময় পার করছেন খুলনার ঘোষড়া, মাগুরাঘোনা ও ডুমুরিয়ার সাধারণ নিম্ন আয়ের জনগণ ও প্রান্তিক খামারিরা।
এই মহাসংকটে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (খুকৃবি) মানবসেবার ব্রত নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ রবিবার(১৩ই অক্টোবর) ঘোষড়া, মাগুরাঘোনা ও ডুমুরিয়ার ৫৫ টি পরিবারের মাঝে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি টিমের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী উপহার দেয়া হয়।
ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, আলু, চিড়া, লবণ, চিনি ও স্যালাইন। একই সাথে প্রান্তিক ৪৫ টি পরিবারের মাঝে প্রাণিখাদ্য বিতরণ করা হয়।
প্রাণিখাদ্যের মধ্যে মিক্সড ভুষি বিতরণ করা হয়। প্রাণিস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি, এনিমেল অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ইন্টার্ন ভেটেরিনারি ডাক্তার ও শিক্ষার্থীগণ।
ইন্টার্ন ডা. আহনাফ তাহমিদ শব্দ বলেন, বন্যা পরিস্থিতির এই সময় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিরসন , প্রাণির স্বাস্থ্য রক্ষা ও খামারির আর্থিক দুরবস্থা দূরীকরণে প্রান্তিক খামারীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।
প্যাকেজিং ও কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সাহায্য সহযোগিতা করেন স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীগণ। তাদের মধ্য থেকে একজন শিক্ষার্থী এম এম ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, এরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘটে যাওয়া সমস্যা দূরীকরণে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতেও তারা এরকম জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।
এছাড়াও বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি থেকে উন্নয়নের লক্ষ্যে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম বন্যাদূর্গত এলাকার মানুষদের সাথে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেন। বন্যার পানির কারণে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে এবং অনেক বসত-ভিটার ক্ষতিসাধন হয়েছে। চিংড়ি ও মাছের ঘের প্লাবিত হওয়ায় অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মাছ চাষিরা।
ফিশারিজ এন্ড ওশান সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব জানায়, সামনের দিনগুলোতো আমরা চেষ্টা করবো বন্যা পরবর্তী সহায়তা কর্মসূচী করার। একই সাথে মাছ চাষিরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাদেরকে মাছের পোনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
শতশত কৃষক ও খামারিদের অপূরনীয় ক্ষতি লাঘব করতে প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ। পুনর্বাসন কাজে সবাইকে এগিয়ে আসার উদ্বাত্ত আহ্বান উদ্বাস্তু বানভাসী মানুষের। বিজয়ী তারুণ্যের সর্বাত্মক সহযোগিতায় প্রাকৃতিক প্রলয়কে রুখে দিয়ে কৃষকের মুখে হাসিফুটবে এমনটাই প্রত্যাশা খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।