বিএনপি নেতাকর্মীকে দেখলেই পেটাচ্ছেন ঢাকার ধামরাইয়ের রোয়াইল ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সেলিম খান ওরফে ভেজাইল্যা সেলিম (৩৫)। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির খুব পরিচিত মুখ তিনি।
জানা গেছে, উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন সেলিম। শেখ হাসিনা সরকারের এমপিসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে তার বিভিন্ন ছবি এখনো ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অন্য আরও অনেকের মতো বদলে গেছেন তিনি। রাতারাতি হয়ে গেছেন বিএনপি। বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে এখন সরব সেলিম। এমনকি প্রকাশ্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের বেধড়ক পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সেলিম খান রোয়াইল এলাকার ছাবু খানের ছেলে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ও মোহাদ্দেস হোসেন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদকে ব্যবহার করে অবৈধভাবে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত সেলিম স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবহার করে এলাকায় নৈরাজ্য চালিয়েছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে নিয়মিত আওয়ামী লীগের নানা রাজনৈতিক কাজে যোগ দিতেন তিনি, যার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল। এমনকি অনেককে মারধরের ঘটনা পর্যন্ত আছে। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ মাটির ব্যবসা ও ভূমি দখলের মাধ্যমে কোটি টাকা কামিয়েছেন তিনি। কিন্তু ৫ আগস্ট বিকেলে সরকার পরিবর্তনের খবর পেয়ে, তিনি নিজে বিএনপি রাজনীতিতে যোগদান করেন। উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীমের সঙ্গে ইদানীং তার সখ্যতা দেখা গেছে। একইসঙ্গে এলাকায় নিজেকে এখন বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন সেলিম।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর রোয়াইল ইউনিয়নে একটি সমাবেশ করে বিএনপি। সেখানে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম তার সমর্থকদের নিয়ে যোগ দিলে অভিযুক্ত সেলিম দলবল নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ইউপি সদস্য ইব্রাহিম গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে রাজধানীর নিওরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমিসহ আমার পুরো পরিবার দীর্ঘদিন যাবত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত ১৬ আগস্ট আমাদের ইউনিয়নে বিএনপির একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে আমি একজন বিএনপির কর্মী হিসেবে আমার লোকজনসহ মিছিল নিয়ে যাই। পরে সেখানে উপস্থিত ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম মাস্টারের উপস্থিতিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম খান তার দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমি এবং আমার দুই ছেলেসহ অন্তত ১০ জন আহত হই।
রোয়াইল ইউনিয়মের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিম জানান, ইব্রাহিম মেম্বার ও তার পরিবার আজীবন বিএনপি করেছে। এটা আমাদের এলাকার সবাই জানে। আর সেলিম খান আমাদের এলাকায় ভেজাইল্যা সেলিম নামেই পরিচিত। সে একজন চিহ্নিত আওয়ামী লীগের কর্মী। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে তিনি এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। গত ১৬ তারিখ আমাদের ইউনিয়নের বিএনপির সম্মেলন ছিল সেখানে সমাবেশ শেষে সেলিম খানের সঙ্গে ইব্রাহিম মেম্বারের কথা কাটাকাটির জেরে সেলিম দলবল নিয়ে ইব্রাহিম মেম্বারকে মারধর করেছেন বলে জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সেলিম খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইব্রাহিম মেম্বারের ছেলে যুবদলের সাইদুরের সঙ্গে আমার টাকা দেনা-পাওনার একটি বিষয় ছিল। সেটি নিয়ে বিরোধের জেরে ১৬ তারিখ সম্মেলনে তারা প্রথম আমাকে টানাহেঁচড়া করে। পরে আমি বিষয়টি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম মাস্টারকে জানিয়ে তার সঙ্গে সম্মেলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে তারা যুবদলের লোকজন মিলে আমাকে মারধর করে। আমি এলাকায় সংগঠন করি সেই সুবাদে অনেক সময় চেয়ারম্যান এমপির সঙ্গে ছবি তুলেছি কিন্তু আমি আওয়ামী লীগ করি না। আমি একজন বিএনপি কর্মী। আমার বিরুদ্ধে এখন একটা মহল প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।