“আমার মেধাবী সন্তান শহীদ হয়েছে দেশের জন্য’ স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হবেন একমাত্র ছেলে সন্তান আবু রায়হান । সেভাবেই তাকে ছোটবেলা থেকে গড়ে তুলেছেন তার পরিবার । প্রাথমিক থেকে প্রথম স্থান অধিকারী রায়হান দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫ ।
সদ্য প্রকাশিত আলীম পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন আবু রায়হান। কিন্তু স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ছুঁতে পারলোনা তার পরিবার । কৃতিত্বের উত্তীর্ণ হলেও অধরা রয়ে গেল তাদের স্বপ্ন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যান আবু রায়হান । ঐ দিন পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরদিন ৫ আগস্ট বিকালে পৌর শহরের ছিট চিলারং এলাকায় সাবেক কমিশনার একরামুদৌলার বাড়িতে আরও সঙ্গীদের সঙ্গে মীমাংসার জন্য যান আবু রায়হান । সেখানে পূর্ব পরিকল্পিত গ্যাস সিলিন্ডারে দেওয়া আগুনে ঝলসে গুরুতর আহত হন আবু রায়হান সহ ৪ জন । এরপর রংপুর থেকে ঢাকায় নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবু রায়হান ।
এ ঘটনায় একে একে পুড়ে যাওয়া ৪ জনই মারা যান । ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফজলে আলম ও রেহেনা বেগম দম্পতির সন্তান আবু রায়হান । বাড়ির পাশ স্কুল থেকে প্রাথমিক শেষ করে উত্তর হরিহরপুর মাদরাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ ও আলীমে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রায়হান । মেধাবী আবু রায়হান ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন । এর আগে সন্তানের ফলাফলের কৃতিত্বে মুখরিত ছিল পরিবার ও প্রতিবেশীরা ।
এবারের ফলাফলে সন্তানের স্মৃতি দেখে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন পরিবার,স্বজন ও প্রতিবেশীরা । তবুও শহীদ সন্তানের বাবা-মা ভুলে থাকার চেষ্টা করেন ছেলের অনুপস্থিতি । সন্তানের জীবনের বিনিময়ে হলেও আর কোন প্রাণহানি ও বৈষম্য চাননা রায়হানের বাবা-মা ।
প্রতিবেশি শাহরিয়ার আলম বলেন, আমার থেকে দু বছরে ছোট হলেও বেড়ে ওঠা আমাদের একসাথে । তার মত মেধাবী ও ভদ্র ছেলে গ্রামে খুব কম রয়েছে। তাকে নিয়ে সবার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে । আজকের ফলাফলে সে থাকলে অনেক খুশি হত । আরেক প্রতিবেশী জাহেদা খাতুন বলেন, এলাকার ভাতিজা হয় রায়হান । তার মেধা দেখে সবাই তাকে ডাক্তার বলে ডাকতাম। সে বেঁচে থাকলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হত । আমরা একজন এলাকার গর্বিত ডাক্তার পেতাম ।
শহীদ আবু রায়হানের মা রেহেনা বেগম বলেন, আমার সন্তানকে নিয়ে কেউ কটু মন্তব্য করতে পারবেনা । সে অনেক ভদ্র ও ভালো ছিল । বলত মা তোমার স্বপ্ন পূরণ করব ডাক্তার হয়ে ।
আমার ছেলে তো জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর তো কোন ছেলে নেই আমার । কে স্বপ্ন পূরণ করব এখন? কি হবে আমার পরিবারের? শহীদ আবু রায়হানের বাবা ফজলে আলম রাশেদ বলেন, আজকের আনন্দের দিনে এতটুকু ভেবে আনন্দ লাগছে যে, আমার মেধাবী সন্তান শহীদ হয়েছেন দেশের জন্য । আমি একজন গর্বিত শহীদের বাবা। তাকে একজন মানবিক চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন পূরণ হয়নি । তবে তার রেখে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ আবার নতুন করে সাজবে এই প্রত্যাশা ।