রাষ্ট্রীয় সন্মাননা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের মরদেহ রাস্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া লাখো মানুষের অশ্রুসিক্তে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
১৯ অক্টোবর শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থান জামে মসজিদের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পাশে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজা নামাজের আগে সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ফারুক ভাই আমাদের একাত্তরের সঙ্গী। তার সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
এসময় জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং এলাকার লাখো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলার ঘটনায় করা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয় তাকে ।
এর আগে বিকেল সাড়ে তিনটায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকে কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই সাধারণ দাফনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবন ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীরা।
এসময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।
ফারুকের পরিবার জানায়, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন । গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। পরে শনিবার সকালে তার কোনো সাড়াশব্দ না পেলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফারুকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বাড়িতে জেলার বিভিন্ন স্তরের মানুষ সমবেদনা জানতে জড়ো হন।
ফজলুর রহমান খান ফারুক পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য এবং টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার তাকে ২০২১ সালে একুশে পদক দেয়।
ফজলুর রহমান ফারুক ১২ অক্টোবর ১৯৪৪ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ওয়ার্শী ইউনিয়নের কহেলা গ্রামে জন্মগ্রহণ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পাস করেন।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান এর মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দরা মরহুম ফজলুর রহমান খান এর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তারা বলেন, মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি আজীবন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, কতিপয় শিক্ষার্থীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান এর মতো সৎ, পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও আদর্শবান রাজনীতিবিদকে রাস্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন করাগতে প্রশাসনকে বাধ্য করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।