চলনবিল অঞ্চলের বসবাসকারীরা সবসময় শহরের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে সব ধরনের সবজি কিনতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশেও ছন্দপতন ঘটেছে। এখন শহর আর গ্রামের হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম প্রায় একই।
আর গত কয়েক দিনে বিলাঞ্চলের হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ অনেকটাই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে তাড়াশ পৌর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলু ছাড়া সব সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যেমন- ২০০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ এখন ৩৫০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির বেগুন ১০০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির করল্লা ৮০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির মুখীকচু ৬৫ টাকা, ৫০ টাকা কেজির কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা, ৫৫ টাকা কেজির ঝিংগা ৬৫ টাকা, ৪০ টাকা কেজির মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির বরবটি ৬০ টাকা, ৪৫ টাকা কেজির মুলা ৬০ টাকা, ৬০ টাকা কেজির ওল ৭৫ টাকা, ৫০ টাকা কেজির পটল ৬০ টাকা, ৫০ টাকা পিচের জাতি লাউ ৭০ টাকা, ২০ টাকা আঁটির লাল শাক ৩০ টাকা, ২০ টাকা আঁটির কলমিশাক ২৫ টাকা, ৫০ টাকা পিসের কলার থোঁড় ৮০ টাকা। আর এভাবে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে।
তাড়াশ পৌরবাজারে সবজি কিনতে আসা দোবিলা গ্রামের অটোভ্যান চালক জাফর আলী মণ্ডল (৫১) জানান, সারা দিনে অটোভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন তা পরিবারের ছয় সদস্যের সবজি কিনতে গেলে পকেট যেন গড়ের মাঠ হয়ে যায়। সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের এ অস্বাভাবিক দামে তিনি স্বল্প আয়ের মানুষ হয়ে চাপে আছেন- এমনই ভাষ্য তার।
আর এ অবস্থা শুধু অটোভ্যানচালক জাফর আলী মণ্ডলই নন, এলাকার নিম্ন ও মধ্যবিত্তদেরও একই অবস্থা বলে জানান বাজার করতে আসা স্কুলশিক্ষক ফারজানা খাতুন (৩৮)। তিনিও সবজির বর্তমান দামকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। তিনি জানান, যা বেতন পাই তা দিয়ে সকজি কেনা, ওষুধ, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল, ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ দিয়ে আর কুলিয়ে উঠতে পারছি না।
তাড়াশ বাজারে সবজি কিনতে আসা তাড়াশ পৌর এলাকার কোহিত মহল্লার কৃষক জাকির হোসেন জানান, কয়েক দিন পূর্বেও প্রায় সব ধরনের সবজির দাম মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু শীতের সবজির ভরা মৌসুমে এখন আবারও সবজির দাম চড়া। আর দামের ঠেলায় আমরা সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছি। বিশেষ করে ৬০ টাকা কেজির বেগুন কি কারণে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
অবশ্য, নাদোসৈয়দপুর হাটের কাঁচা সবজি বিক্রেতা মো. মফিজুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, চলনবিলাঞ্চলের বেশির ভাগ তরকারি বগুড়া, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী এলাকার পাইকারি দরের হাট-বাজার থেকে আসে। আর সে সব বাজারেও পাইকারি দরের তরকারির দাম হঠাৎ করেই আবার কেজিতে গড়ে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক।
অপরদিকে বর্তমান সময়ে সবজির অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক ভাবছেন রানির হাট এলাকার সবজি বিক্রেতা মো. জালাল হোসেন। তিনি জানান, বগুড়া, পাবনা, চান্দাইকোনা, নাটোর, রাজশাহী এলাকা থেকে চলনবিলাঞ্চলের পাইকারি সবজি ক্রেতারা সবজি কেনেন। আর এসব মোকামেই সবজির দাম চড়া। তাই সবজি ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কিনে চড়া দামেই বিক্রি করবেন এটাই স্বাভাবিক।
তাড়াশের বিনসাড়া হাটে আসা কৃষক মো. রবিউল করিম ক্ষোভ ঝেড়ে কালবেলাকে বলেন, সবজি এখন সিন্ডিকেটের ব্যবসা। সবজি ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি, বন্যা, খরা এমন নানা অজুহাতে সবজির দাম বেশি নিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছেন। আর বাজার মনিটরিং না থাকায় তারা যা ইচ্ছে তাই করছেন। এতে দেখার কেউ নেই।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খালিদ হাসান কালবেলাকে বলেন, চলনবিল একটি বৃহৎ এলাকা। তবে তাড়াশে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে দ্রব্য মূল্য সহনীয় রাখার চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।