এমনিতে আমার ঘরবাড়ি ছিল না। গোল পাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘরে থাকতাম। তারপর এই ঘূর্ণিঝড় আর বন্যা আমার সব তছনছ করে দিয়েছে। গেল তিন মাসে চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেড়িবাঁধের উপর একটা ঝুপড়ি ঘরে কষ্টে আছি। এই পরিস্থিতিতে জেন্ডার ব্যেজড ভায়োলেন্স ইন এমারজেন্সি (জি ভি ভি আই ই) ইউ এন এপ পি এ এবং এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় বাধন মানব উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে ডিগনিটি কিট উপকরণ পেয়েছি। একসঙ্গে এত উপহার পাব কখনো ভাবিনি।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর ) সাইক্লোন রিমেলে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর মর্যাদা সুরক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বাগেরহাটের শরণখোলার জেন্ডার ব্যেজড ভায়োলেন্স ইন এমারজেন্সি ডিগনিটি কিট উপকরণ নিতে এসে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন ৪৪বছর বয়সী সালেমন বেগম।
এদিন সকাল থেকে শরণখোলা আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তাপালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ৭৫০ জন কে ডিগনিটি কিট উপকরণ বিতরনে সহায়তা দেয় জেন্ডার ব্যেজড ভায়োলেন্স ইন এমারজেন্সি (জি ভি ভি আই ই)।
এর আগে গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিনভর মোংলার চিলা উত্তর হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিট সামগ্রী সহায়তা দেওয়া হয় ২শ দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে।
কিট উপকরন সহায়তা সামগ্রীর মধ্যে ছিল, কাপড় ধোয়া সাবান, মশারি, মহিলাদের অন্তর্বাস, পুনরায় ব্যবহার করার জন্য মাসিকের কাপড়, সেভিং রেজার, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, চুলে ব্যবহার করা তেল, রেফারেল পাথওয়ে, নেইল কাটার, শ্যাম্পু, গামছা, রাবালের স্লিপার, চার্জার লাইট, গোসলের সাবান, চিরুনি, প্লাস্টিকের বালতি, শাড়ি, ডিটারজেন্ট পাউডার, আ্যান্টিসেপ্টিক লিকুইট।
এ কিট সামগ্রী পেয়ে হাসির ঝিলিক দেখা যায় সালেমন বেগমের চোখে-মুখে। তিনি বলেন, আসলে এখনকার দিনে অনেকেই বিনামূল্যে খাবার দেয়। কিন্তু এ ধরনের সহযোগিতা আমার জীবনে কখনো পাইনি। আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি নারীদের জন্য কেউ এ সকল উপহার সামগ্রী দিবে। এতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি।
শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দা থেকে আসা ক্ষতিগ্রস্ত হামিদা বেগম বলছিলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন ২৩ বছর হলো। তারপর মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে খাই। চাল ডাল অনেকেই দেয় কিন্তু এই সব উপকরণ কেউই দেয় না, জীবনে এটা প্রথম পেলাম।
অসহায় তাছলিমা বেগম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে বসতঘরের চালা উড়ে গেছে, পানিতে ভেসে গেছে রান্নাঘর। ঝড়ের দিন থেকে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটছে। তার পর মোটামুটি ভাবে থাকছি কিন্তু এই লবন পানিতে বেচে থাকা খুবই কষ্টকর। আমরা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেচে আছি, তার মাঝে এই সহযোগিতার কথা সারা জীবন মনে থাকবে।
এ সময় বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এ এস এম মঞ্জুরুল হাসান মিলন, এম এইস পি এস এস কাউন্সিলার সাজমুন নাহার ইস্টি, এম এইস পি এস এস কাউন্সিলার সুরাইয়া আরোবি সর্না, ফিল্ড সুপার ভাইজার দিলারা জামান , কমিউনিটি এম এন সাপোর্ট ভলেন্টিয়ার ফাতেমা খাতুন এ ফোর টি প্রকল্পের ফিনান্স অফিসার উম্মে জুবাইয়েদা, শরনখোলা উপজেলা রেডক্রসের টিম লিডার সাইয়েদ আহামেদ, সদস্য ফারিয়া আক্তার, মোঃ ইমরান হোসেন, সামিমা আক্তার, এক্টিভিটতা মোঃ ইমরান, মাফুজ মাঝি, অমিত পাল, সামিয় সুলতানা সহ অনেক কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার আমেনা আক্তার , তাসলিমা খাতুন, মুসলিমা খাতুনসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।