সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে টানা চার দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে টানা বৃষ্টি শুরু হবে, যা আগামী শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। বিশেষ করে সিলেটে ভারি বৃষ্টি ও ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আর দেশের অন্যান্য জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে দেশের সর্বোচ্চ ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মোংলায় ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি কমে আগামী ৩ দিনে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
মাসের শুরুতে পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, বৃষ্টি হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। গত আগস্ট মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। বেশি বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ২০ আগস্টের পর থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্তত ১১ জেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়। এরপর অবশ্য বৃষ্টি কমে যায়। চলতি মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রচণ্ড গরমও পড়েছিল। কোনো কোনো দিন দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহও বয়ে গেছে। বৃষ্টি ও গরমের মধ্যেই মাস কেটেছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি কমছে। অন্যদিকে ধরলা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আগামী ৩ দিন তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমতে পারে। তাতে করে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। রংপুর বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদী- আত্রাই, পুনর্ভবা, করতোয়া, টাঙ্গন ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি কমছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, রোববার তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল, সেটি সোমবার ডালিয়া এবং কাউনিয়া দুই পয়েন্টেই নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে উজানে পদ্মার পানি বাড়লেও সেটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়, ইছামতি-যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি সমতল বাড়ছে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর বিভাগের এসব নদীর পানি আগামী তিন দিন কমতে পারে। রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৫ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রাজশাহী বিভাগে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে, তবে তা এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ বিভাগে আত্রাই, বাঙ্গালি, করতোয়া ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, তবে তা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অঞ্চলের খোয়াই ও জাদুকাটা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও সারিগোয়াইন ও কংস নদীতে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার নিচে আছে বলে বুলেটিনে বলা হয়েছে।