আগামী ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেন দিবস। অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় শহিদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয়। গণতন্ত্রের জন্য এই ভূ-খণ্ডের মানুষের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৪৭ সালে ভ্রান্ত নীতি দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের যাত্রাটা গণতান্ত্রিক ছিল। তৎকালীন পশ্চাৎপদ সামন্তবাদী সমাজ ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পথ-পরিক্রমায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য বাঙালির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।
সদ্য স্বাধীন দেশে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল একটি সংবিধান। এ রকম পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকার সংবিধান প্রণয়নের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার নজির রয়েছে। যেমন- পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম শাসনতন্ত্র প্রণীত হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পর। অথচ গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ছিল বলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দেশের মানুষকে সর্বোৎকৃষ্ট একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি গভীর খাদে ফেলে দেয়।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূ-লুণ্ঠিত হয়। দীর্ঘসময় সামরিক স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয় বাংলার জনগণ। এ রকম অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আপসহীন মনোভাব নিয়ে বিরামবিহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যান জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ এই লড়াইয়ে অনেক মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে। তবে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যুবলীগ নেতা নূর হোসেনের আত্মত্যাগ বিশেষভাবে স্মরণীয়। 'স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক'- স্লোগান বুকে-পিঠে ধারণ করে নূর হোসেন ছিলেন মিছিলের অগ্রসেনানী, গণতান্ত্রিক চেতনায় প্রত্যয় দীপ্ত যুবক। মিছিলে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর ঘাতক বুলেট কেড়ে নেয় নূর হোসেনের প্রাণ। গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনের এই আত্মত্যাগ ব গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় পুনঃপ্রবেশে বাংলাদেশের জন্য নতুন পথরেখা নির্মাণ করে।
শহিদ নূর হোসেন দিবস এমন সময়ে সমাগত যখন বাংলাদেশে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। অগণতান্ত্রিকভাবে একটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। দেশের জনগণের ইচ্ছা-অভিলাষের প্রতি তোয়াক্কা না করে তারা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। একটি আন্দোলনকে হস্তগত করে তার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভূ-লুণ্ঠিত করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার পক্ষপাতদুষ্টুভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধেকে নির্বাসিত করছে। ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে আওয়ামী লীগসহ গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল মানুষদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গণহত্যা ও বাছ-বিচারহীনভাবে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা গণহত্যার শামিল। সরকারের প্রত্যক্ষ সারা দেশে মব সন্ত্রাস চালিয়ে ভিন্নমত দমনের নিকৃষ্ট অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক, মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠলেও সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। খাদ্য মূল্যস্ফীতি স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেহেতু সরকারের কোনো আইনগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈধতা নেই সেহেতু জনসাধারণের প্রতি তারা কোনো দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করছে না। বরং কেউ কোনো নাগরিক দাবিতে সোচ্চার হলে সরকার বেআইনিভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা অভিনব পন্থা আবিষ্কার করেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী অগণতান্ত্রিক এই গোষ্ঠীর মতিভ্রম হয়েছে। ফলে তারা রাষ্ট্রে ও সমাজে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করে গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে এবং অভূতপূর্ব নৈরাজ্যবাদ কায়েম করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে সঠিক পন্থায় আনতে হলে গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী জনগণকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং এই অগণতান্ত্রিক অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চলমান রাখতে হবে। এই লড়াইয়ে শহিদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগ আমাদের সীমাহীন প্রেরণা জোগাবে।
আগামী ১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, বিকাল ৩টায় শহিদ নূর হোসেন চত্বরে অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত মিছিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। একই সাথে দেশব্যাপী সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।