পানিবন্দি ভবদহ বিলপাড়ের দুর্গত মানুষ রাস্তার ওপর টং ঘর বানিয়ে গবাদি পশুর সঙ্গে মিলে করছেন বাস। শৌচাগার ও টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ভুক্তভোগী মানুষ। অবশ্য ইতোমধ্যে কিছু টিউবওয়েল, স্যানিটেশন স্থাপন করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রতি ভারি বৃষ্টিতে বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধ ভবদহ বিলপাড়ের হাজারো মানুষ ঠাঁই নিয়েছে রাস্তার ওপর। ভবদহ বিলপাড়ের কমপক্ষে তিনশ গ্রামের তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
সরেজমিনে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা, পদ্মনাথপুর, সুজাতপুর, হাটগাছাসহ একাধিক গ্রাম ঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়ে। ওই এলাকার অধিকাংশ বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারা এসব মানুষের অনেকেই মনিরামপুর-নওয়াপাড়া সড়কের ওপর টং ঘর বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। একটু অবস্থা সম্পন্ন পরিবার যাতায়াতের জন্য বাড়ির উঠানে বাঁশের সাঁকো আর ডিঙ্গি নৌকা বানিয়ে নিয়েছেন। আর অসচ্ছল পরিবারগুলো রাস্তার ওপর ঘর বানিয়ে গৃহপালিত পশুর সঙ্গে দিনাতিপাত করছে। ঘরের এক পাশে থাকছে গরু-ছাগল আরেক পাশে চৌকি বানিয়ে রাত যাপন করছেন তারা। সেখানেই চলছে খাওয়া-দাওয়া।
হাটগাছা গ্রামের ফুগী মণ্ডল, মান্দারী মণ্ডল, অধীর মণ্ডল, ক্ষুদেরাম বিশ্বাস, গুরুদাস মণ্ডল, মালতি বালাসহ একাধিক ভুক্তভোগী জানান, আর কতকাল তারা এভাবে কষ্টে দিন যাপন করবেন। ভবদহ দিয়ে পানি সরে গেলে তাদের কষ্টের লাঘব হবে। কিন্তু কেউ তাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। এভাবে বৃষ্টি হলেই বছরের পর বছর পানিবন্দি হয়ে গরু-ছাগলের সঙ্গে আর কত দিন কাটাবেন তারা।
লখাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক উৎপাল বিশ্বাস বলেন, টয়লেট আর খাবার পানির সংকট দেখা দেওয়ায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
ভবদহ সংশ্লিষ্ট কুলটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পানিবন্দি মানুষকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোরাল দাবি জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয়দেব দত্ত জানান, সংকট নিরসনে গত সপ্তাহে দুর্গত এলাকায় ১০টি টিউবওয়েল ও ৪০টি অস্থায়ী ল্যাট্রিন স্থাপনসহ ৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট (হ্যালোজেন) বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তন্ময় বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, জলাবদ্ধ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।