শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
⁨১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেনের স্মরণে ও গণতন্ত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল তিতাসের দুলারামপুরে শর্ট বাউন্ডারী ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত জশন-এ-খাজায় মাতোয়ারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশালে নিষিদ্ধ পিরানহা ৩শ কেজি মাছ জব্দ বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিনের চাঁদাবাজি : শোকজ কেন্দ্রীয় কমিটির বীরগঞ্জে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ বীরগঞ্জে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ পূর্ব লন্ডনে বরইকান্দি ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকের মিলনমেলা ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত আসছে শৈত্যপ্রবাহ, কিন্তু কবে? নারীদের মাপ নেবে না পুরুষ দর্জি, নারী সুরক্ষায় নতুন প্রস্তাব

ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫০০ গুলি খেয়ে বিছনায় কাতরাচ্ছেন কলেজ ছাত্র লিটন

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি- / ৫ পড়া হয়েছে
আপডেট শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন কলেজছাত্র লিটন। তার মাথায় ১৫টি ও পুরো শরীর জুড়ে আরও প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক গুলির আঘাত রয়েছে। উন্নত চিকিৎসায় শরীর থেকে গুলিগুলো বের করা সম্ভব হলে তিনি স্বাভাবিক হবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তবে তার চিকিৎসা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি গত ৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁও শহরের কোর্ট চত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন লিটন। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা পৌরশহরের দক্ষিণ সালান্দর পাড়ার মিলন নগর মহল্লার বাসিন্দা ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবার অভাবের সংসারে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে লিটন ও খণ্ডকালীন চাকরি করতেন একটি ঔষুধ ফার্মেসিতে, এখন সে চাকরি ও নেই। তার বৃদ্ধ বাবার পক্ষে কোনোরকমে প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো করানো সম্ভব হলেও উন্নত চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ে অপারগ তিনি।

 

ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার লিটনের চিকিৎসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছররা গুলিতে যদি খুব অসুবিধা না হয়, তাহলে এসব বের করতে আমি নিরুৎসাহিত করি। কারণ ওর মাথায় যে ১৫ টি গুলি আছে, সে জন্য ১৫ বার অস্ত্রোপচার করতে হবে। এতে রোগীর আরও জটিল অবস্থা তৈরি হবে। এ ছাড়াও গুলিগুলো খুবই ছোট, কেটে সঙ্গে সঙ্গে বের করা যাবে-এমনটিও না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি গুলি খুঁজে বের করা খুব ক্রিটিক্যাল এবং রোগী-ডাক্তার দুজনের জন্যই কষ্টকর। তবে কোনো গুলির কারণে শরীরে ইনফেকশন বা পুঁজ বের হয়, তখন সেটা আমরা বের করে চিকিৎসা দেই। তবে এত বেশি সংখ্যক গুলি বের করা একেবারে প্রায় অসম্ভব।’

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে-বসে কাতরাচ্ছেন লিটন। তার পাশে হতাশা নিয়ে বসে আছেন মা-বাবা। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত তারা। মা লিলি বেগমের কপালে চিন্তার ভাঁজ আর চোখে পানি।
এই প্রতিবেদকের কাছে লিটন সেই দিনের ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে জানান, ছাত্র আন্দোলনে ডাকা সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি ৪ আগস্ট দুপুরে শহরের কোর্ট চত্বরের পূর্ব পাশের গলিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ তাদের গুলি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। কিন্তু তারা চলে যাওয়া শুরু করলে তাদের দিকে গুলি ছোড়ে পুলিশ।

এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কিছু সময়ের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে জ্ঞান ফেরার পর উঠে দাঁড়ালে তার খুব কাছে থেকে আবারও এলোপাতাড়ি ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ হয়। একপর্যায়ে কোনোরকমে হামাগুড়ি দিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। ওই বাড়ির লোকজন লিটনের রক্তঝরা মাথায় কাপড় দিয়ে বেঁধে দেন।

একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকেসহ গুলিবিদ্ধ অন্যদের ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে শহরের একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করে ১২টি গুলি তার শরীর থেকে বের করা হয়। এর একদিন পর (৬ আগস্ট) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর রংপুর সিএমএইচ হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ভর্তি ছিলেন। সেখানেও অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু শরীর থেকে একটি গুলিও বের করা সম্ভব হয়নি।

এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তিনি বাড়িতেই রয়েছেন। ব্যথায় কাতর লিটন বলেন, ‘গুলি লাগার পরে শরীরের প্রত্যেকটা জায়গা যেন অবশ হয়ে আছে। একা কোনো কাজ করতে পারি না। অন্য কারও সহযোগিতা নিয়ে করতে হয়। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকতে পারি না, বসেও থাকতে পারি না। আবার গরম লাগলে ব্যথার তীব্রতা হয়। সারাক্ষণ বাতাসে না হয় ঠান্ডা জায়গায় থাকতে হয়। রাতে ঘুমাতে গেলে মাথায় বিঁধে থাকা গুলির যন্ত্রণায় ঘুমও হয় না। বালিশে মাথায় দিতেও কষ্ট হয়। খুব অসহায় বোধ হয়।’ লিটন বলেন, ‘এখন সরকারের কাছে একটি চাওয়া-আমার শরীর থেকে গুলিগুলো বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়। আবার আমি স্বাভাবিকভাবে হাঁটা, চলা-ফেরা করতে চাই।

এই দেশের জন্য, আমার পরিবারের জন্য কাজ করতে চাই।’ লিটনের বাবা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘টানাটানির সংসারে ধার-দেনা করে ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে হচ্ছে। বড় স্বপ্ন ছিল ছেলেটা পড়ালেখা শেষ করে একদিন সংসারের হাল ধরবে। পরিবারের অভাব দূর হবে। কিন্তু আমাদের সাজানো স্বপ্ন এখন শেষ হয়ে গেল!’ সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল উইংয়ের দায়িত্বরত সদস্য রাকিব ইসলাম বলেন, ‘আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে লিটনের শরীরের গুলিগুলো বের করে দেওয়া সম্ভব হলে, দ্রুত সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার
  • ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930