অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রমে ‘ধীরগতি’ এবং খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ্ন প্রকাশ করেছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ মনে করে, শেখ হাসিনা সরকারের বিদায় হলেও জনগণ এখনো গণতন্ত্রে উত্তরণের পথনির্দেশ পায়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের নিবিড় যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের সঙ্গেও সরকারের আলোচনার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।
সোমবার রাতে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সভায় এ বিষয়গুলো ছাড়াও শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি, ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে হঠাৎ করে অস্থিরতা সৃষ্টি নিয়ে সদস্যরা আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ, হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন অংশ নেন।
সভায় উপস্থিত সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয়টি আলোচনায় তোলেন একজন সদস্য। অন্য সদস্যরা সরকারের এ পদক্ষেপের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁরা মনে করেন, এ দেশে ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। সেটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬২–এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১–এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে প্রমাণিত। বিএনপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, রাজনৈতিক সহাবস্থান এবং ইতিবাচক রাজনীতির ধারা চালুর পক্ষে থাকবে।
সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের ইতিমধ্যে অপসারণ করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন নীতি কেন, সে প্রশ্ন তোলা হয় সভায়। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ বলেন, দেশের বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের অধিকাংশই পালিয়ে গেছেন বা আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা পেতে জনগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভও হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। না হলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়তে পারে।
এ ছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের সংঘটিত হওয়া সব গুম, খুন ও নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বিচারের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়।