শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

মধু খাওয়ার উপকারিতা

অনলাইন ডেস্ক / ৫ পড়া হয়েছে
আপডেট বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪

মহান সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত এক মহা নিয়ামতের নাম মধু। এটি একদিকে যেমন পুষ্টিকর  পানীয়, তেমনি রোগ নিরাময়েও। একে মহৌষধ হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুত্তাকিদের যে জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলো, তাতে আছে নির্মল পানির নহর,  দুধের ঝরনা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝরনা।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫)

আরেক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমার রব মৌমাছির প্রতি ইলহাম করেছেন যে পাহাড়ে, বৃক্ষে আর উঁচু চালে বাসা তৈরি করো। অতঃপর তুমি প্রত্যেক ফল থেকে আহার করো এবং তুমি তোমার রবের সহজ পথে চলো। তার পেট থেকে এমন পানীয় বের হয়, যার রং ভিন্ন ভিন্ন, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগ নিরাময়। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন আছে ওই জাতির জন্য, যারা চিন্তা করে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৮-৬৯)

মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের মধুর মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রাচীন গ্রীক ধর্মে, জিউস এবং অলিম্পাসের বারো দেবতার খাদ্য ছিল অমৃত এবং অমৃত আকারে মধু।

হিন্দু ধর্মে, মধু জীবনের পাঁচটি অমৃতের মধ্যে একটি (পঞ্চমৃত)। মন্দিরে, মধু অভিষেক নামক একটি রীতিতে দেবতাদের উপর মধু ঢেলে দেওয়া হয়। বেদ এবং অন্যান্য প্রাচীন সাহিত্যে মধুর ব্যবহার একটি মহাঔষধি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

মধুর উপকারিতা

বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটে মধুর প্রায় ৩০টি উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে, এর মধ্যে কয়েকটি আলোচনা করা হলো-

১. আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময়ে: মধু পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময় করে থাকে। যারা দীর্ঘদিন ধরে আমাশয় ও পেটের পীড়ায় ভোগেন তারা নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ মধু পান করলে এই ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

২. ওজন কমাতে: মধুতে কোনো চর্বি থাকে না। তাই মধু খেলে শরীরে চর্বি বাড়ে না। বরং মধু পেট পরিষ্কার করে, চর্বি কমায়, ফলে ওজন কমে। তাই যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা মধু পান করুন।

৩. শক্তি বৃদ্ধি করে: মধু শক্তি বৃদ্ধিকারী পানীয়। শরীরে তাপ ও শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে মধু। দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে, মধু শরীরকে সুস্থ রাখে।

৪. হজমে সহায়তা: মধুর মধ্যে যে শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয়। কারণ, এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে, তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে। এছাড়া, মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যাসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুকজ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।

৫. রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এটি ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা–চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়। এছাড়াও মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ, এতে অনেক পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ থাকে।

৬. যৌন দুর্বলতায়: যৌন দুর্বলতা প্রতিহতে মধু কার্যকরী। পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা রয়েছে, তারা যদি প্রতিদিন মধু পান করেন, তাহলে বেশ উপকার পাবেন। হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে অনেক দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

৭. তারুণ্য বজায় রাখতে: আমরা সবাই নিজের তারুণ্য ধরে রাখতে চাই। আর এই তারুণ্য ধরে রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। মধু একটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়।

৮. রক্ত পরিষ্কারক: মধু রক্ত পরিস্কার করে। এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন খেলে রক্ত পরিষ্কার হবে। এছাড়া মধু রক্তনালিগুলোও পরিষ্কার করে। তাছাড়া, মধুতে রয়েছে আয়রন, যা রক্ত উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (RBC, WBC, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।

৯. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে: মধু উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দুই চামচ মধুর সঙ্গে এক চামচ রসুনের রস মেশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা দুইবার খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সঙ্গে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে কাজ করে। মধু হৃৎপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

১০. রূপচর্চায়: মেয়েদের রূপচর্চায় মধু বেশ জনপ্রিয়। রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ পুরনো। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, অনেকে গোলাপী ঠোঁট ধরে রাখতে মধু ব্যবহার করে থাকেন।

১১. গলার স্বর: মধু গলার স্বর সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে। যারা কন্ঠশিল্পী তারা গলা পরিস্কারর রাখতে, স্বরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে মধু খেয়ে থাকেন।

১২. হাড় ও দাঁত গঠনে: মধুর গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে। তাই হাড় ও দাঁতের সুগঠনের জন্য নিয়মিত মধু খাওয়া যেতে পারে।

উপরোক্ত উপকারিতা ছাড়াও ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে, অনিদ্রায় সমস্যা সমাধানে, মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়, শরীরের পানিশূন্যতা রোধে, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে, হাঁপানি রোধসহ আরো বহু কারণে মধু খাওয়া উপকারি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার
  • ৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
  • ২৩শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)

Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930